প্রথম এক্সপ্রেসো খাওয়া


তখন মনে হয় য়ুনিভার্সিটিতে পড়ি, একজ্যাক্ট সময়টা মনে পড়ছে না। তবে এটা মনে পড়ে যে তখন বাংলাদেশে এন্ড্রয়েড ফোন গুলো সবে মাত্র আসতে শুরু করছে। দাম অনেক বেশী । ৪০ হাজারের নিচে কোন ফোন পাওয়া যেত না। সেই সময়ে আমার এক ফ্রেন্ড বসুন্ধরা সিটি থেকে একটি HTC ফোন কিনেছিল।
আমি আর আরেকজন বন্ধু সাথে গিয়েছিলাম, এসিস্ট করার জন্য , যাতে বেষ্ট ফোন চুজ করতে পারে। কারণ টেক আইটেম চুজ করার ব্যাপারে ছিল আমাদের, বিশেষ করে আমার ছিল অসাধারণ দক্ষতা 😂😂😂
নিয়তির কি কানেক্টিভিটি......, আজ এত বছর পরে এখনো একই কাজ করছি ।
তখন একটা নিয়ম ছিল যে বন্ধুদের নিয়ে শপিং এ গেলে যা কিনবে তার দামের ৭.৫% , যাদেরকে নিয়ে যাচ্ছে, তাদেরকে খাওয়াতে হবে। আরিফ আর রাকিবের আবিষ্কার করা নিয়ম ছিল এটা। পরে এই নিয়ম অন্যান্য সার্কেলেও ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। তখন বেশীর ভাগই টেকনোলজির জিনিস-পত্র কেনা হত, যেমনঃ পিসি, মনিটর। এই বড় জিনিসের দামের ৭.৫% খারাপ না। ভালমত খাওয়া যেত।
তো যেটা বলতেছিলাম ফোন কিনার পর বসুন্ধরা সিটিতে খাওয়া হল। কিন্তু খাওয়ার খরচ ফোনের দামের ৭.৫% থেকে অনেক কম হয়েছিল । বসুন্ধারা সিটি থেকে একটু সামনের দিকে যাওয়ার সময় চোখে পড়ল কাওরান বাজারের বারিস্তা।
তো বন্ধুকে বললাম , লেটস হ্যাভ সাম কফি। কফির প্রতি এফেকশন সেই অনেক আগে থেকেই । ক্লাস সেভেন / এইট থেকেই কফি খেতাম ।
কিভাবে যে কফির প্রতি আকর্ষণ হল - সেটা আরেক টপিক । অন্য দিন হয়তবা বলব । অথবা যে বইটি লেখার প্লান করেছি "মাই সো- কল্ড লাইফ" সেই বইতে থাকবে 😂😂😂😂
তখন তো 4G ছিল না, ইভেন জিপি ছাড়া অন্য কারো EDGEও ছিল না। GPRS ই ভরসা ছিল । তখন রেজুলেশন বলতে শুধুমাত্র বুজতাম, ছবির আর মনিটরের রেজুলেশন। রেজুলেশনের অরেকটা মানে যে "চারিত্রিক দৃঢ়তা" সেটাও জানতাম না - এইটা নিয়ে আরেকটি ফানি Experience আছে, সেটা অন্যদিন লিখব। এখন 4G আর এন্ড্রয়েডের যুগে শুধু ইংলিশই না, অনেক কিছুই জানা অনেক সহজ।


তো সেই সময়ে বাসায় নরমালি হাতে গুলানো কফি খেতাম । ঢাকায় ফাইভ স্টার আর বারিস্তার আউটলেট গুলো ছাড়া অন্য কোথাও রোস্ট করা কফি পাওয়া যেত বলে মনে পরে না। হ্যা হাতে গুলানো কফি ছিল অনেক জায়গায়তেই ।
ক্যাপাচিনো, Latte, Expresso, Americano এই গুলোর নাম জানতাম মুভি দেখার কারণে । কিন্তু একজ্যাক্ট কোনটা কি ? কোনটাতে ...কি কি ইনগ্রেডিয়েন্ট.... কি পরিমানে থাকে সেটা জানতাম না।
বারিস্তাতে অনেকক্ষন মেনু দেখার পর আমরা এক্সপ্রেসো অর্ডার করলাম। এক্সপ্রেসো অর্ডার করার অন্যতম আরেকটি কারণ ছিল কম দাম । ৭০ টাকা করে ছিল মনে হয়। অন্যের উপর এত প্রেশার দেওয়াটা আমাদের নীতিতে ছিল না। 😂😂😂
তো ওয়েটার কফি আনার পর দেখলাম খুবই সুন্দর সোনালী পানীয় । দেখেই মনে হয়েছিল খেতে অনেক মজা হবে । এটা আপনাকে মানতেই হবে যে Expresso খেতে যতই তিতকুটা হোক না কেন, দেখতে অনেক সুন্দর।😂😂😂
মুখে দেওয়ার পর সকল সুন্দরের অবসান হল, পুরো পুরি আশাহত হলাম । এমন তিতা জিনিস জীবনেও খাই নাই, চিরতা ভেজা পানিও এত তিতা না। ৪/৫ টি মিনি প্যাক চিনি দেওয়ার পরও তিতকুটার বিন্দুমাত্র অবসান হল না। শেষে হাল ছেড়ে, একটুও না খেয়ে চলে আসলাম। এটাই ছিল আমার জীবনের শেষ ও প্রথম Expresso খাওয়া।
এখন ক্যাপাচিনো, মকা খাওয়া হয়। মাঝে মাঝে আমেরিকানোও খাওয়া হয়। কিন্তু কষ্টের ব্যাপার হল আজ সেই বারিস্তা নেই । কত ভাল লাগার স্মৃতি জড়িয়ে ছিল কাওরান বাজারের এই বারিস্তাকে ঘিরে, কত জন হারিয়ে গেছে যাদের সাথে নিয়মিত কফি খাওয়া হত , তাদের কেউ এই দুনিয়াতে নেই , কেউবা এই শহরে নেই , কেউবা দেশে । অফিসের আগে কত সকাল, অফিসের পর কত সন্ধ্যা কেটেছে এখানে, কত বৃষ্টি দেখলাম এখানে বসে, কত অপেক্ষার প্রহরের সঙ্গী ছিল এই বারিস্তা ।

Comments

Popular posts from this blog

পিৎজা এবং বই

How to Install R on Ubuntu